নিজস্ব প্রতিনিধি , কলকাতা - বাঙালি সমাজে পারিবারিক ভালোবাসা, মমতা ও সম্পর্কের বন্ধনকে ঘিরে নানা উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে “ভাই ফোঁটা” অন্যতম এক স্নেহময় ও আবেগঘন উৎসব। এটি মূলত ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও দৃঢ়, স্নেহপূর্ণ ও আন্তরিক করে তোলে। দীপাবলির পরের দিন, অর্থাৎ কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিন বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘায়ু, সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন, আর ভাইরা বোনের সুরক্ষা ও কল্যাণের অঙ্গীকার করেন।
ভাই ফোঁটার উৎপত্তি নিয়ে নানা পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনি হল যম ও যমুনার গল্প । পুরাণ মতে, মৃত্যুর দেবতা যম তাঁর বোন যমুনার সঙ্গে দেখা করতে বহু বছর পর তার বাড়ি যান। যমুনা আনন্দে আপ্লুত হয়ে ভাইয়ের কপালে তিলক বা ফোঁটা দেন, তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং নানা রকম খাবার পরিবেশন করেন। যম খুব খুশি হয়ে ঘোষণা করেন, “যে ভাই এই দিনে বোনের কাছ থেকে ফোঁটা গ্রহণ করবে, তার অকালমৃত্যু হবে না।" সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া—যা পরবর্তীতে “ভ্রাতৃদ্বিতীয়া” বা “ভাই ফোঁটা” নামে পরিচিত হয়।
আরেকটি কাহিনি অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ নারকাসুর দানবকে বধ করে ফিরে আসার পর তার বোন সুভদ্রা তাঁকে ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। সেই দিনটিও দ্বিতীয়া তিথিতে পড়েছিল। এই ঘটনাও ভাই ফোঁটার উৎসের সঙ্গে যুক্ত বলে ধরা হয়।
ভাই ফোঁটা উৎসবের মূল ভাবনা হলো স্নেহ ও আশীর্বাদ। সকালে বোনেরা উপবাস থেকে স্নান করে পূজার আয়োজন করেন। ফোঁটা দেওয়ার জন্য বিশেষ উপকরণ লাগে— চন্দন, দই, দূর্বা ঘাস, সিঁদুর, চালের গুঁড়ো, ও মিষ্টি । অনেক পরিবারে রাঙা ধান, তুলসীপাতা বা গঙ্গাজলও ব্যবহার করা হয়।
বোন ভাইকে চৌকাঠে বসিয়ে তাঁর কপালে ফোঁটা দেন এবং মন্ত্রোচ্চারণ করে বলেন —
“চন্দন খই দুরুয়া দান, যমুনা করে যমের ত্রাণ, আমি দি ভাইকে ফোঁটা, যম যেন না করে ছোঁয়া।”
(অবশ্য অঞ্চল ভেদে মন্ত্রের পার্থক্য শোনা যায়। ) এই মন্ত্রের অর্থ হলো, বোন ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছেন যেন মৃত্যুর দেবতা যমও ভাইকে স্পর্শ করতে না পারেন। ফোঁটা দেওয়ার পর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়, অনেক পরিবারে পায়েস, লুচি, আলুর দম, রসগোল্লা, সন্দেশ প্রভৃতি ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্না হয়। এরপর ভাই বোনকে উপহার দেন—যেমন পোশাক, অলংকার, বই বা টাকার উপহার।
ভাই ফোঁটা প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশে বাঙালি হিন্দু সমাজে পালিত হয়। তবে একই ভাবধারার উৎসব ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও দেখা যায় - উত্তর ভারতে ,এই উৎসব “ভাই দোজ” নামে পরিচিত, গুজরাত ও মহারাষ্ট্রে একে “ভাও বিজ” বলা হয়, নেপালে , পালিত হয় “ভাই টিকা” নামে।
কলকাতা, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, আসানসোল ছাড়াও দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, পুনে প্রভৃতি শহরে থাকা বাঙালিরাও এই উৎসব পালন করেন। এমনকি প্রবাসী বাঙালিরাও বিদেশে বসে ভাই ফোঁটার আয়োজন করেন। প্রযুক্তির যুগে অনেকেই ভিডিও কল বা অনলাইন ফোঁটার মাধ্যমে এই ঐতিহ্য পালন করেন—যা “ভার্চুয়াল ভাই ফোঁটা” নামে জনপ্রিয় হয়েছে।
ভাই ফোঁটা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি পারিবারিক বন্ধনের প্রতীক। এই দিনে ভাই-বোনের মধ্যে যত দূরত্বই থাকুক, সবাই একত্রিত হয়। পারস্পরিক ভালোবাসা, যত্ন ও দায়বদ্ধতার বার্তা ছড়িয়ে দেয় এই উৎসব। একদিকে যেমন এটি নারী-পুরুষের সম্পর্কের সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক, অন্যদিকে পারিবারিক ঐক্যেরও প্রতিফলন।
ভাই ফোঁটা বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা যুগের পর যুগ ধরে ভালোবাসা ও পারস্পরিক বন্ধনের বার্তা বহন করে আসছে। সমাজ যতই আধুনিক হোক না কেন, ভাই ফোঁটার মূল ভাব—ভালোবাসা, রক্ষা ও সম্পর্কের স্থায়িত্ব—আজও অমলিন। এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো পরিবার ও প্রিয়জনের মমতা। তাই ভাই ফোঁটা কেবল একদিনের উৎসব নয়, এটি এক আবেগ, এক ঐতিহ্য, যা বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়ে গভীরভাবে প্রোথিত।
আজ এই আলোকসজ্জা শুধু জগদ্ধাত্রী পুজোতেই সীমাবদ্ধ নয়
বগুলা হাইস্কুল প্রাঙ্গণে কালী পুজোর আয়োজন
কালীঘাট শক্তিপীঠের ইতিহাস
৩৫০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে দীপান্বিতা কালীপুজোর প্রস্তুতি জগৎনগরে
৫৫০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে নিয়ে জাঁকজমক সহকারে পালিত হয় শান্তিপুরের মহিষখাগী কালীমায়ের পুজো
৭৭ বছর বয়সেও যাঁকে দেখে সময় থমকে দাঁড়ায়, তাঁর ফিটনেস রহস্য যেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা
তিলে তিলে গড়ে ওঠে ভাগ্য , প্রাচীন শাস্ত্রের বিধান কি বলছে
দীপাবলির আগে ধনতেরসেই ঘটতে চলেছে এক গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষীয় পরিবর্তন
চারশো বছরের পুরোনো এক বৃদ্ধার ভক্তি, এক শ্যামাঙ্গী কন্যার অলৌকিক আবির্ভাব আর আকর গাছের নিচে প্রতিষ্ঠিত দেবী, আজও জীবন্ত সোনামুখীর ‘হট নগর কালীপুজো’র ঐতিহ্য ও বিশ্বাস।
সর্দি কাশি হলেও অবশ্যই গার্গেল জরুরি
নারকেল তেল বহু যুগ ধরে চুলের যত্নে একটি অপরিহার্য প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে
লবঙ্গতে রয়েছে বিশেষ ভিটামিন
মোটা টাকা বেতনের লোভ দেখানো হয়
মাদক পাচারকারী জাহাজে বিমান হামলা ট্রাম্প প্রশাসনের
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ না করার শাস্তি!
টানা ৩ দিন ধরে তদন্ত চলে ল্যুভর মিউজিয়ামে
মালয়েশিয়ায় আয়োজিত হবে আসিয়ান সম্মেলন