নিজস্ব প্রতিনিধি , কলকাতা - ভারতের প্রাচীনতম ও অনন্য লোকশিল্পগুলির মধ্যে ডোকরা শিল্প (Dokra Art) একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এটি মূলত ধাতু ঢালাইয়ের মাধ্যমে তৈরি এক প্রকার হস্তশিল্প, যার ইতিহাস প্রায় ৪০০০ বছরেরও পুরোনো। আজও এই শিল্প জীবিত আছে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী শিল্পীদের হাতে। ডোকরা শিল্প শুধু ভারতের ঐতিহ্যের প্রতীকই নয়, বরং বিশ্ববাজারেও ভারতীয় হস্তশিল্পের এক বিশেষ পরিচয় বহন করে।

ডোকরা শিল্পের উৎপত্তি প্রাগৈতিহাসিক যুগে, সিন্ধু সভ্যতার সময়কালেই এই শিল্পের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত বিখ্যাত “নৃত্যরত মেয়ে” (Dancing Girl) ব্রোঞ্জের মূর্তিটি ডোকরা শিল্পের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। সেখান থেকেই ধারণা করা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে ধাতু ঢালাইয়ের এই প্রাচীন কৌশল বহু সহস্র বছর ধরে প্রচলিত। সময়ের সাথে সাথে এই শিল্প আদিবাসী সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ডোকরা শিল্পীরা এই ঐতিহ্য আজও জীবিত রেখেছেন।

ডোকরা শিল্প মূলত “ডোকরা কামার” বা “ডমরু” সম্প্রদায়ের মানুষেরা করে থাকেন। তারা মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত, যাদের মধ্যে সাঁওতাল, মালহার, গন্দা, ও লোহার গোত্রের মানুষরা বিশেষভাবে যুক্ত। এই শিল্প তাদের পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। একসময় এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিমা, গৃহসজ্জার সামগ্রী এবং গহনা তৈরি করে বিক্রি করতেন। আজও সেই ঐতিহ্য টিকে আছে, যদিও এখন অনেকেই সরকারি প্রশিক্ষণ ও বাণিজ্যিক সহায়তায় স্থায়ীভাবে এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ডোকরা শিল্পের চর্চা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুর জেলার কিছু অংশে এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এছাড়া ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চল, ওড়িশার ঢেনকানাল ও কেওনঝর জেলা, এবং ঝাড়খণ্ডের হজারি বাগ ও গিরিডি অঞ্চলেও ডোকরা শিল্পীরা বসবাস করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শিল্প আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসা পেয়েছে এবং বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

ডোকরা শিল্পে ব্যবহৃত হয় “লস্ট ওয়াক্স কাস্টিং” বা ‘মোম ঢালাই’ পদ্ধতি। প্রথমে শিল্পী মাটির একটি মডেল তৈরি করেন। এরপর সেই মডেলটিকে মোমের স্তর দিয়ে মোড়ানো হয়। মোমের উপরে আবার একাধিক স্তর মাটি লাগানো হয় এবং শুকিয়ে নেওয়া হয়। শুকানোর পর পুরো মডেলটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে ভিতরের মোম গলে বেরিয়ে যায়। এরপর সেই ফাঁকা জায়গায় গলিত ধাতু (সাধারণত পিতল বা ব্রোঞ্জ) ঢেলে দেওয়া হয়। ঠান্ডা হলে মাটির খোলস ভেঙে ভেতর থেকে বের হয় আসল ধাতব মূর্তি। শেষে সেটি ঘষে মসৃণ করে, পালিশ করা হয়।

ডোকরা শিল্প শুধু একটি হস্তশিল্প নয়, এটি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। যুগের পর যুগ ধরে আদিবাসী শিল্পীরা তাদের সৃজনশক্তি ও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন এই শিল্পের মাধ্যমে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যদিও আজ অনেক শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে, তবুও ডোকরা শিল্প তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের জন্য এখনও বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় লোকশিল্পের গর্ব হিসেবে বিরাজমান।
এর ইতিহাস যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি করুণ পরিণতিও কম নয়
অসংখ্য ভক্ত প্রতিদিন এখানে আসেন মা তারার দর্শনের জন্য
স্বাধীনতার পর রাজপ্রাসাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের কাজ এখন সরকারের হাতে যা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত
প্রথমবারের মতো আইসল্যান্ডে মশার সন্ধান মিলেছে
কিভাবে ঠিক হয়, আর কেনই বা প্রয়োজন হয় নাম দেওয়ার
জেনে নিন জগদ্ধাত্রী পুজোর অতীত ও বর্তমান
আগামী বছরের অক্টোবর থেকে ওয়েলসের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আরএএফ ভ্যালি ঘাঁটিতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে
আজ এই আলোকসজ্জা শুধু জগদ্ধাত্রী পুজোতেই সীমাবদ্ধ নয়
ঝলমলে বাজির পেছনে রয়েছে হাজার বছরের এক চমকপ্রদ ইতিহাস
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনের প্রকাশিত তথ্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে
মাদক পাচারকারীদের জব্দ করতে মরিয়া চেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনের
রুশ উপকূলে পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম ডুবোজাহাজ মোতায়েন আমেরিকার
পাইলটকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফের ভারত-পাক সংঘর্ষ থামানোর কৃতিত্ব নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট