নিজস্ব প্রতিনিধি , কলকাতা - বাজি বা আতশবাজি আজ আনন্দ-উৎসবের অপরিহার্য অংশ। দীপাবলি, নববর্ষ, বিয়ে কিংবা ক্রীড়া জয়ের মুহূর্ত—সবখানেই রঙিন আলো আর শব্দে ভরে ওঠে আকাশ। কিন্তু এই ঝলমলে বাজির পেছনে রয়েছে হাজার বছরের এক চমকপ্রদ ইতিহাস।

প্রায় দুই হাজার বছর আগে, চীনের তাং রাজবংশের সময়ে (প্রায় ৯ম শতাব্দী), আতশবাজির উৎপত্তি বলে ধরা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, চীনা রসায়নবিদরা অমরত্বের ওষুধ খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ বারুদ (Gunpowder) আবিষ্কার করেন। এই বারুদের মূল উপাদান ছিল সালফার, কাঠকয়লা ও পটাশিয়াম নাইট্রেট—যা মিশে বিস্ফোরণ ঘটায়। শুরুতে এই বারুদ বাঁশের খোলের ভিতরে ভরে আগুনে ছুঁড়ে দেওয়া হতো, আর সেখান থেকেই "বাজি" বা "fire cracker"-এর প্রথম রূপের জন্ম। চীনারা বিশ্বাস করত, এই বিস্ফোরণের শব্দ দুষ্ট আত্মা দূর করে এবং শুভ শক্তিকে আহ্বান করে।

ক্রমে চীনা সমাজে এই বাজি উৎসবের অংশ হয়ে ওঠে—বিশেষ করে নববর্ষ, বিয়ে এবং সামরিক বিজয় উদযাপনে। ১৩শ শতকে সিল্ক রোডের মাধ্যমে আরব ব্যবসায়ীরা এবং পরবর্তীতে ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা এই বারুদের রহস্য নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। মধ্যযুগে ইতালি ও স্পেনের কারিগররা আতশবাজিকে নতুন রূপ দেন—তারা বারুদের সঙ্গে বিভিন্ন ধাতব যৌগ মিশিয়ে রঙিন আলো তৈরি করতে শুরু করেন। কপার লবণে নীল, স্ট্রনশিয়ামে লাল, ব্যারিয়ামে সবুজ—এইভাবে আজকের রঙিন বাজির জন্ম হয় ইউরোপেই।

ভারতে বাজির আগমন ঘটে প্রায় ১৪শ শতকে, দিল্লি সুলতানি শাসনের সময়ে। ইতিহাসবিদ ফেরিশ্তা ও আমির খুসরোর লেখায় বারুদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বাস্তবিক অর্থে আতশবাজি জনপ্রিয় হয় মোগল আমলে। সম্রাট হুমায়ুন ও আকবরের দরবারে বিশেষ "আতিশ" বা "আতিশবাজান" নামে কারিগররা ছিলেন, যারা রাজউৎসব বা বিজয় উপলক্ষে আকাশ আলোকিত করতেন। রাজপুত ও মারাঠা রাজবংশের সময়েও এই প্রথা ছড়িয়ে পড়ে রাজসভা থেকে সাধারণ মানুষের উৎসবে।

দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে তামিলনাড়ুর শিবকাশি শহর আজ ভারতের বাজি শিল্পের কেন্দ্রস্থল। ২০শ শতকের শুরুতে শিবকাশির কয়েকজন ব্যবসায়ী ম্যাচ কারখানা থেকে আতশবাজি তৈরির দিকে ঝুঁকেন। পরে সেখানে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা গড়ে ওঠে। বর্তমানে ভারতের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজি উৎপাদিত হয় এই শহরে। দীপাবলি উৎসবের সময় শিবকাশিতে কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়ের জোয়ার দেখা যায়।

তবে বাজির ইতিহাস যেমন উজ্জ্বল, তেমনি এর পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত দিকও আজ বড় উদ্বেগের বিষয়। বাজির ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ মানুষের শ্বাসকষ্ট, প্রাণীর মানসিক চাপ এবং পরিবেশের ক্ষতি করে। তাই এখন অনেক রাজ্যেই “green cracker” বা কম দূষণকারী বাজির প্রচলন শুরু হয়েছে। এই সবুজ বাজিতে নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফারের পরিমাণ অনেক কম থাকে, ফলে ধোঁয়া ও শব্দও তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়।

চীনের আবিষ্কার থেকে ভারতের উৎসবের আকাশ , আতশ'বাজির ইতিহাস যেন আনন্দের প্রতীক । তবে আজকের দিনে এই আনন্দ যেন পরিবেশের ক্ষতি না করে। কোন অবলা প্রাণীর ক্ষতি না করে। সেটাই আমাদের দায়িত্ব। আলোর উৎসব হোক কিন্তু প্রকৃতির রক্ষাই হোক তার আসল বার্তা।
আগামী বছরের অক্টোবর থেকে ওয়েলসের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আরএএফ ভ্যালি ঘাঁটিতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে
আজ এই আলোকসজ্জা শুধু জগদ্ধাত্রী পুজোতেই সীমাবদ্ধ নয়
কালীঘাট শক্তিপীঠের ইতিহাস
ইতিহাস বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে বেরিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে
তাজপুরের আসল সৌন্দর্য তার নিঃস্তব্ধতায়
মোটা টাকা বেতনের লোভ দেখানো হয়
মাদক পাচারকারী জাহাজে বিমান হামলা ট্রাম্প প্রশাসনের
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ না করার শাস্তি!
টানা ৩ দিন ধরে তদন্ত চলে ল্যুভর মিউজিয়ামে
মালয়েশিয়ায় আয়োজিত হবে আসিয়ান সম্মেলন