নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা - ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট, কলকাতার আকাশে তখন কালো ধোঁয়া, রাস্তায় রক্তের স্রোত। সেদিনের নাম আজও ইতিহাসে খোদাই হয়ে আছে “ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে” হিসেবে। মুসলিম লীগের ডাকে শুরু হওয়া সেই কর্মসূচি মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল দাঙ্গা ও হত্যালীলায়। শহরের পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায়। অথচ সেই অমানিশার দিনগুলোয় দাঁড়িয়ে এক সাধারণ মানুষ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন নেতৃত্বের ভার। কলেজ স্ট্রিটের ছাগলের মাংস ব্যবসায়ী গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়,মানুষ যাঁকে চিনত “গোপাল পাঁঠা” নামে।
রক্তাক্ত কলকাতার দিনগুলো :
সেদিন সকাল থেকেই উত্তেজনা স্পষ্ট ছিল। শহরের কেন্দ্রে মুসলিম লীগের সভা থেকে স্পষ্ট ঘোষণা এল - “আজ থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের যুদ্ধ শুরু।” আর সেই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহরজুড়ে শুরু হয় সংগঠিত লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, খুনোখুনি। কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজার, শ্যামবাজার,যেখানে চোখ যায় সেখানেই আগুন আর রক্তের দাগ। আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ।
পুলিশ তখন কার্যত অদৃশ্য। গোটা প্রশাসন নিস্ক্রিয়। শহর যেন হিংসার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মুসলিম লীগের বাহিনী একে একে দখল নিচ্ছিল গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। কলকাতাকে তারা চেয়েছিল পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করতে।
গোপালের উত্থান :
এই অস্থিরতার মধ্যেই উঠে আসেন গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। পেশায় মাংস ব্যবসায়ী হলেও তাঁর চরিত্রে ছিল অদম্য সাহস। ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ছেলেদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয়, ঝুঁকি নিতে কখনও পিছপা হতেন না। তাই দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে পড়তেই তিনি বুঝলেন, নিষ্ক্রিয় থাকলে সর্বনাশ অনিবার্য।
অল্প সময়ে তিনি আশেপাশের তরুণদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ভারত জাতীয় বাহিনী’। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র প্রায় ছিল না, কিন্তু ছিল একরাশ দৃঢ়তা। গোপালের নেতৃত্বে রাস্তায় নেমে আসে এই বাহিনী। দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে শুরু হয় মুখোমুখি লড়াই।
“একজন হিন্দু মরলে, দশজন মুসলমান মরবে।”
-- স্লোগান তুলেছিল গোপাল বাহিনী। কিন্তু গোপালের কঠোর নির্দেশ ছিল - নারী, শিশু, বৃদ্ধ কিংবা নিরীহ কাউকে আঘাত করা যাবে না।
প্রতিরোধের শহর :
১৮ আগস্ট থেকেই পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। গোপাল বাহিনী কলেজ স্ট্রিট,শ্যামবাজার ঘিরে দাঙ্গাকারীদের পিছু হঠাতে শুরু করে। দখল হয়ে যাওয়া এলাকাগুলি ধীরে ধীরে মুক্ত হয়। গোপালের বাহিনী শুধু লড়েনি, আশ্রয়ও দিয়েছিল অনেককে,শুধু হিন্দু নয়, আক্রান্ত মুসলমান পরিবারকেও।
এই প্রতিরোধে বদলে যায় সমীকরণ। কয়েক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয় - কলকাতাকে মুসলিম লীগের দখলে নেওয়া সহজ হবে না। শহরকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী বানানোর স্বপ্ন ভেঙে যায়। কলকাতা রক্ষা পায় এক ভয়ঙ্কর ভাগ্য থেকে।
গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ :
দাঙ্গার শেষে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কলকাতায় আসেন মহাত্মা গান্ধী। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় গোপালের। গান্ধী তাঁকে অস্ত্র নামাতে বলেন। গোপাল শান্তভাবে জবাব দেন - “আমি কখনও নিরীহ কাউকে আঘাত করিনি। আমার লড়াই ছিল আমার মানুষদের বাঁচানোর জন্য।”
এই উত্তরই হয়তো ব্যাখ্যা করে দেয় গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের দর্শন,যেখানে প্রতিশোধ নয়, বরং প্রতিরোধই ছিল মূলমন্ত্র।
ইতিহাসের আদালতে গোপাল :
গোপাল পাঁঠাকে আজ ইতিহাস দুইভাবে মনে রাখে।
একদিকে তিনি হিন্দু সমাজের কাছে রক্ষাকর্তা, কলকাতার নায়ক।
অন্যদিকে প্রগতিশীল ইতিহাসবিদদের কাছে তিনি বিতর্কিত চরিত্র, যাঁর বাহিনীও পাল্টা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছিল।
তবে গবেষকদের বড় অংশ একমত,যদি গোপালের প্রতিরোধ না থাকত, কলকাতার রাজনৈতিক মানচিত্র আজ অন্যরকম হতো। পশ্চিমবঙ্গ হয়তো পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য হিসেবে শুরু করত তার যাত্রা।
গোপাল পাঁঠার নির্দেশাবলী:
নারী, শিশু, বয়স্কদের আক্রমণ নয়।
আশ্রয়প্রার্থীকে ধর্ম দেখে বিচার নয়।
আঘাত করলে দশগুণ জবাব, কিন্তু আগে নয়।
গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন না কোনও রাজনীতিবিদ, না কোনও সেনানায়ক। তিনি ছিলেন কলকাতার এক সাধারণ ব্যবসায়ী। অথচ সেই সাধারণ মানুষই রক্তাক্ত আগস্টের দিনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন শহরের রক্ষাকর্তা হয়ে। তাঁর হাতে যদি সাহস না থাকত, যদি না তিনি তরুণদের একত্রিত করতেন, হয়তো কলকাতার কাহিনি আজ অন্যরকম হতো।
তাঁর নামের পাশে তাই আজও দুটি অভিধা বেজে ওঠে,তিনি শুধু হিন্দুদের রক্ষক নন, বরং কলকাতারও রক্ষক।
চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের জন্য মমতার কাছে আবেদন শুভেন্দুর
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে যদিও নিয়মের ব্যতিক্রম
সেনার পদক্ষেপে রাজনীতিতে তুঙ্গে বিতর্ক, জবাবে সর্বত্র মিছিলের ডাক মমতার
'সেনা নয়, বিজেপি দায়ী', মঞ্চ খোলার ঘটনায় কেন্দ্রকে নিশানা মমতার
সেনার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মমতা
প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে তাণ্ডবের ঘটনায় গ্রেফতার বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহের ছেলে শিবম
উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, আজ রাত থেকেই দক্ষিণবঙ্গে প্রবল ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা
বিধানসভায় শোক সহ বাংলা বিরোধী ইস্যুতে তীব্র নিন্দা প্রস্তাব
মঙ্গলবার মামলার শুনানি
তফশিলি উপজাতি কোটা দখলে ভুয়ো শংসাপত্র
ভারী ব্যাগের অস্বীকারে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধরের অভিযোগ
অভিযুক্তকে আলিপুর আদালতে পেশ
‘চিকিৎসকদের হেনস্থা হলে প্রতিবাদে নামব’,হুঁশিয়ারি সরকারি চিকিৎসক সংগঠনের
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন উনি , অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রীর
দার্জিলিং সমতল ও কাঁথি জেলা সংগঠন নিয়ে বৈঠকে অভিষেকের দাওয়াই
ভূমিকম্পের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে
হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে আরও একধাপ এগোল ইজরায়েল
হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে
একের পর এক বোমা ফাটালেন ট্রাম্পের পরামর্শদাতা
এসসিও সামিটে পাকিস্তানকে ‘নির্লজ্জ’ বলে কটাক্ষ