68a2a726d7fc9_IMG-20250818-WA0001
আগস্ট ১৮, ২০২৫ সকাল ০৯:৪০ IST

১৮ আগস্টের আগুনে জন্ম এক নায়কের: কলকাতার রক্ষক গোপাল পাঁঠা

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা - ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট, কলকাতার আকাশে তখন কালো ধোঁয়া, রাস্তায় রক্তের স্রোত। সেদিনের নাম আজও ইতিহাসে খোদাই হয়ে আছে “ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে” হিসেবে। মুসলিম লীগের ডাকে শুরু হওয়া সেই কর্মসূচি মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল দাঙ্গা ও হত্যালীলায়। শহরের পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার দর্শকের ভূমিকায়। অথচ সেই অমানিশার দিনগুলোয় দাঁড়িয়ে এক সাধারণ মানুষ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন নেতৃত্বের ভার। কলেজ স্ট্রিটের ছাগলের মাংস ব্যবসায়ী গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়,মানুষ যাঁকে চিনত “গোপাল পাঁঠা” নামে।

রক্তাক্ত কলকাতার দিনগুলো :

সেদিন সকাল থেকেই উত্তেজনা স্পষ্ট ছিল। শহরের কেন্দ্রে মুসলিম লীগের সভা থেকে স্পষ্ট ঘোষণা এল - “আজ থেকে পাকিস্তান আন্দোলনের যুদ্ধ শুরু।” আর সেই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শহরজুড়ে শুরু হয় সংগঠিত লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, খুনোখুনি। কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজার, শ্যামবাজার,যেখানে চোখ যায় সেখানেই আগুন আর রক্তের দাগ। আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ।

পুলিশ তখন কার্যত অদৃশ্য। গোটা প্রশাসন নিস্ক্রিয়। শহর যেন হিংসার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মুসলিম লীগের বাহিনী একে একে দখল নিচ্ছিল গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। কলকাতাকে তারা চেয়েছিল পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করতে।

গোপালের উত্থান :

এই অস্থিরতার মধ্যেই উঠে আসেন গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। পেশায় মাংস ব্যবসায়ী হলেও তাঁর চরিত্রে ছিল অদম্য সাহস। ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ছেলেদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয়, ঝুঁকি নিতে কখনও পিছপা হতেন না। তাই দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে পড়তেই তিনি বুঝলেন, নিষ্ক্রিয় থাকলে সর্বনাশ অনিবার্য।

অল্প সময়ে তিনি আশেপাশের তরুণদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ভারত জাতীয় বাহিনী’। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র প্রায় ছিল না, কিন্তু ছিল একরাশ দৃঢ়তা। গোপালের নেতৃত্বে রাস্তায় নেমে আসে এই বাহিনী। দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে শুরু হয় মুখোমুখি লড়াই।

“একজন হিন্দু মরলে, দশজন মুসলমান মরবে।”

-- স্লোগান তুলেছিল গোপাল বাহিনী। কিন্তু গোপালের কঠোর নির্দেশ ছিল - নারী, শিশু, বৃদ্ধ কিংবা নিরীহ কাউকে আঘাত করা যাবে না।

প্রতিরোধের শহর :

১৮ আগস্ট থেকেই পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। গোপাল বাহিনী কলেজ স্ট্রিট,শ্যামবাজার ঘিরে দাঙ্গাকারীদের পিছু হঠাতে শুরু করে। দখল হয়ে যাওয়া এলাকাগুলি ধীরে ধীরে মুক্ত হয়। গোপালের বাহিনী শুধু লড়েনি, আশ্রয়ও দিয়েছিল অনেককে,শুধু হিন্দু নয়, আক্রান্ত মুসলমান পরিবারকেও।

এই প্রতিরোধে বদলে যায় সমীকরণ। কয়েক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয় - কলকাতাকে মুসলিম লীগের দখলে নেওয়া সহজ হবে না। শহরকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী বানানোর স্বপ্ন ভেঙে যায়। কলকাতা রক্ষা পায় এক ভয়ঙ্কর ভাগ্য থেকে।

গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ :

দাঙ্গার শেষে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কলকাতায় আসেন মহাত্মা গান্ধী। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় গোপালের। গান্ধী তাঁকে অস্ত্র নামাতে বলেন। গোপাল শান্তভাবে জবাব দেন - “আমি কখনও নিরীহ কাউকে আঘাত করিনি। আমার লড়াই ছিল আমার মানুষদের বাঁচানোর জন্য।”

এই উত্তরই হয়তো ব্যাখ্যা করে দেয় গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের দর্শন,যেখানে প্রতিশোধ নয়, বরং প্রতিরোধই ছিল মূলমন্ত্র।                  
               
ইতিহাসের আদালতে গোপাল :

গোপাল পাঁঠাকে আজ ইতিহাস দুইভাবে মনে রাখে।

একদিকে তিনি হিন্দু সমাজের কাছে রক্ষাকর্তা, কলকাতার নায়ক।

অন্যদিকে প্রগতিশীল ইতিহাসবিদদের কাছে তিনি বিতর্কিত চরিত্র, যাঁর বাহিনীও পাল্টা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছিল।

তবে গবেষকদের বড় অংশ একমত,যদি গোপালের প্রতিরোধ না থাকত, কলকাতার রাজনৈতিক মানচিত্র আজ অন্যরকম হতো। পশ্চিমবঙ্গ হয়তো পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য হিসেবে শুরু করত তার যাত্রা।

গোপাল পাঁঠার নির্দেশাবলী:

নারী, শিশু, বয়স্কদের আক্রমণ নয়।

আশ্রয়প্রার্থীকে ধর্ম দেখে বিচার নয়।

আঘাত করলে দশগুণ জবাব, কিন্তু আগে নয়।

গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন না কোনও রাজনীতিবিদ, না কোনও সেনানায়ক। তিনি ছিলেন কলকাতার এক সাধারণ ব্যবসায়ী। অথচ সেই সাধারণ মানুষই রক্তাক্ত আগস্টের দিনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন শহরের রক্ষাকর্তা হয়ে। তাঁর হাতে যদি সাহস না থাকত, যদি না তিনি তরুণদের একত্রিত করতেন, হয়তো কলকাতার কাহিনি আজ অন্যরকম হতো।

তাঁর নামের পাশে তাই আজও দুটি অভিধা বেজে ওঠে,তিনি শুধু হিন্দুদের রক্ষক নন, বরং কলকাতারও রক্ষক।

আরও পড়ুন

তৃণমূলের দাবিই তাহলে সত্যি বলে প্রমাণিত হল , কমিশন SIR এর সময়সীমা বাড়াতেই দাবি শাসক শিবিরের
নভেম্বর ৩০, ২০২৫

SIR নিয়ে কমিশনের সময়সীমা বৃদ্ধিতে স্বস্তিতে BLOরা

রাজভবনের নাম বদলে লোক ভবন , রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে শুরু নয়া বিতর্ক
নভেম্বর ৩০, ২০২৫

রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল

রাষ্ট্রপতি শাসনে SIR হওয়া উচিত ছিল , ভোটার তালিকা প্রকাশ পিছানোর সিদ্ধান্তে কটাক্ষ সুকান্তের
নভেম্বর ৩০, ২০২৫

কমিশনের নয়া সিদ্ধান্তে উত্তপ্ত রাজনৈতিক মহল

২০০২ ডিজিটাল তালিকায় নাম না থাকলেও হয়রানি নয়, হার্ড কপি যাচাইয়ের নির্দেশ সিইও দফতরের
নভেম্বর ৩০, ২০২৫

ভোটার হয়রানি রুখতে কঠোর সিইও

SIR বিতর্কে বেকায়দায় কমিশন , চাপের মুখে পড়ে পিছোল ভোটার তালিকা প্রকাশের দিনক্ষণ
নভেম্বর ৩০, ২০২৫

১৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হবে খসড়া ভোটার তালিকা

ইএম বাইপাসে মাদক খাইয়ে তরুণীকে নিগ্রহ , গার্ডেনরিচ থেকে গ্রেফতার এক যুবক
নভেম্বর ৩০, ২০২৫

বাকি ২ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ

২০২১ এর থেকেও বেশি ব্যবধানে পরাজয় হবে , BLO ভাতা ইস্যুতে বিজেপি - কমিশনকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ অভিষেকের
নভেম্বর ৩০, ২০২৫

৪ মাস আগের বিজ্ঞপ্তি জারি করার অভিযোগ তৃণমূলের

ইএম বাইপাসে মাদক খাইয়ে শ্লীলতাহানি, কলকাতায় ফের নারী নির্যাতনের অভিযোগ
নভেম্বর ২৯, ২০২৫

নির্যাতিতা তরুণী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

SIR ক্ষোভে ফুঁসছে তৃণমূলপন্থী BLO রা , সিইও দফতরের সামনে ধর্নায় উত্তাল রাজপথ
নভেম্বর ২৯, ২০২৫

পুলিশের সঙ্গে BLO দের সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠে সিইও দফতর

কেন্দ্রের নির্দেশে নাম বদল , দেশজুড়ে রাজভবনের নতুন পরিচয় লোকভবন
নভেম্বর ২৯, ২০২৫

বাংলায় সূচনা লোকভবনের যুগ

দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে বসা সম্ভব নয় , নবান্নের লোকায়ুক্ত বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না শুভেন্দু
নভেম্বর ২৯, ২০২৫

চার বছর পরও লোকায়ুক্ত বৈঠক এড়ালেন শুভেন্দু

BLO সুরক্ষা নিয়ে কড়া বার্তা নির্বাচন কমিশনের , ফুঁসে উঠল তৃণমূল
নভেম্বর ২৯, ২০২৫

পুলিশ কমিশনারকে চিঠি নির্বাচন কমিশনের

নৌসপ্তাহ উদযাপনে আত্মনির্ভর ভারতের শক্তি প্রদর্শন, কলকাতায় INS খানজর ও INS কোরা
নভেম্বর ২৮, ২০২৫

কলকাতায় দুটি গাইডেড মিসাইল কর্ভেট

সিরিয়াস ইস্যুতে দেরি চলবে না , সীমান্তে কাঁটাতার ইস্যুতে রাজ্যকে কড়া হুঁশিয়ারি হাইকোর্টের
নভেম্বর ২৮, ২০২৫

আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ আদালতের

পাখির চোখ ২৬-এর ভোট, কলকাতায় বাড়ি ভাড়া শাহের!
নভেম্বর ২৮, ২০২৫

জোর কদমে চলছে ভোটের প্রস্তুতি

TV 19 Network NEWS FEED