নিজস্ব প্রতিনিধি , বহরমপুর - ইতিহাসের গন্ধ মিশে আছে বাংলার প্রতিটি ইট-পাথরে, আর সেই ইতিহাসের মূর্ত প্রতীক মুর্শিদাবাদ। এক সময় বাংলার নবাবি শাসনের রাজধানী ছিল এই শহর। কলকাতা থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরের এই জেলা যেন অতীতের এক জীবন্ত জাদুঘর। একটু সময় বের কর ঘুরে এলে বোঝা যায়—ইতিহাস বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে বেরিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে।
যাতায়াত - কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ পৌঁছনোর সবচেয়ে সহজ উপায় ট্রেন। হাওড়া বা সিয়ালদহ স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন যায়—ভাগীরথী এক্সপ্রেস, লালগোলা প্যাসেঞ্জার, হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস ইত্যাদি। সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। বাসেও যাওয়া যায়—এসপ্ল্যানেড বা করুণাময়ী থেকে বহরমপুরগামী সরকারি ও বেসরকারি বাস নিয়মিত ছাড়ে। যারা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যেতে চান, তারা NH12 ধরে গেলে রাস্তার দু’পাশের সবুজ মাঠ, গঙ্গার দৃশ্য আর গ্রামীণ বাংলার রঙিন দৃশ্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।
থাকার জায়গা - মুর্শিদাবাদে থাকার জন্য অপশন প্রচুর। বহরমপুর শহরই থাকার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক, কারণ এখান থেকেই সব দর্শনীয় স্থানে সহজে যাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দফতরের ‘বহরমপুর ট্যুরিস্ট লজ’ যথেষ্ট জনপ্রিয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাজেটবান্ধব। এছাড়াও হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল ইন্ড্রা প্রভৃতি ভালো অপশন। প্রতিদিনের ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে।
দর্শনীয় স্থান - প্রথমেই দেখা উচিত হাজারদুয়ারি প্রাসাদ—নবাব নজিম হুমায়ুন জাহের সময়ের এই প্রাসাদে ১০০০ দরজা (যার মধ্যে ৯০০ আসল, ১০০ নকল)। মিউজিয়ামের ভিতরে নবাবি যুগের তলোয়ার, বন্দুক, গহনা আর ছবিতে ভরা ইতিহাসের ভান্ডার। কাছেই নিমতলা কবরস্থান, ওয়াসিফ মঞ্জিল, আর ইমামবাড়া—সবাই ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য স্বপ্নের জায়গা।
গঙ্গার ওপারে কাটরা মসজিদ—মুর্শিদ কুলি খানের তৈরি এই স্থাপত্যের গাম্ভীর্য এখনো মন ছুঁয়ে যায়। কিরীটেশ্বর মন্দির, ঝাঞ্জি পরগনা , আর কাঠগোলা বাগান ঘুরে দেখলে মুর্শিদাবাদের বহুমাত্রিক ইতিহাস আরও উন্মোচিত হয়। বিকেলের দিকে ভাগীরথীর ধারে সূর্যাস্তের দৃশ্য যেন পুরো ভ্রমণকে সম্পূর্ণ করে দেয়।
খরচের হিসেব - কলকাতা থেকে ট্রেনে যাওয়া-আসা মিলিয়ে ভাড়া পড়বে আনুমানিক ৫০০–৬০০ টাকা। দুই দিন এক রাত থাকলে থাকা ও খাওয়া মিলিয়ে মোট খরচ প্রায় ২৫০০–৩০০০ টাকার মধ্যে সামলানো যায়। একটু ভালো হোটেল বা গাইড নিলে ৪০০০ টাকায় আরামদায়ক উইকেন্ড কাটানো সম্ভব।
মুর্শিদাবাদে গেলে মনে হয়, সময় যেন পিছিয়ে গেছে তিনশো বছর। গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে যখন হাজারদুয়ারির দিকে তাকানো হয় মনে হয় ইতিহাসের নিঃশব্দ কণ্ঠ ডাকে। এখানে প্রতিটি ইটের ফাঁকে ফাঁকে নবাবি ঐশ্বর্যের গল্প লুকিয়ে আছে। ব্যস্ত শহুরে জীবনের বাইরে মুর্শিদাবাদে এসে যেন একটু থেমে শ্বাস নেওয়া যায়—অতীতের মাটির গন্ধে ভরে ওঠে মন।
মাদক পাচারকারী ডুবজাহাজে সফল হামলায় আনন্দে আত্মহারা ট্রাম্প
বিবৃতি জারি কাতারের বিদেশমন্ত্রকের
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে মরিয়া ট্রাম্প
আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর আহত ৩৫ জন
প্রতিবাদে সামিল আইনজীবী থেকে শিক্ষক