নিজস্ব প্রতিনিধি , হিমাচল প্রদেশ - ভারতের ভ্রমণ মানচিত্রে এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত নয়। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য , সংস্কৃতি আর ইতিহাসে এতটাই সমৃদ্ধ যে সেগুলো যেন প্রকৃতির হাতে গড়া এক নিখুঁত শিল্পকর্ম। হিমাচল প্রদেশের মালানা গ্রাম ঠিক তেমনই একটি স্থান। যেখানে গেলে মনে হবে আপনি যেন সময়ের চক্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে , এক পুরাতন সভ্যতার মাঝে প্রবেশ করেছেন। এই গ্রামটি শুধু প্রাকৃতিক নয় , সাংস্কৃতিক সহ সামাজিক দিক থেকেও এতটাই আলাদা যে একে বলা হয় "India’s Oldest Democracy"।
মালানার বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
মালানা গ্রামটি হিমালয়ের চন্দ্রখানি সহ দেওতিব্বা পর্বতের মাঝে অবস্থিত। চারপাশে তুষারাবৃত পাহাড় , সবুজ উপত্যকা , শান্ত পরিবেশ সহ ঠান্ডা পাহাড়ি হাওয়া – সব মিলিয়ে এটি এক স্বর্গীয় দৃশ্যপট তৈরি করে। গ্রামটির পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে মালানা নালা নদী , যার জল স্বচ্ছ এবং বরফ গলা স্রোতে ভরা। দূর থেকে দেখতে গ্রামটি যেন পাহাড়ের বুকে আঁকা এক প্রাচীন চিত্রকর্ম।
মালানার ভাষা
মালানার নিজস্ব ভাষার নাম কানাশি। যেটি ভারতের অন্য কোথাও ব্যবহার হয় না। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন , এই ভাষা শুধুমাত্র দেবতা জামলু (Jamlu Rishi) দ্বারা তাদের কাছে প্রদান করা হয়েছে। এমনকি এই ভাষা বাইরের কেউ শিখতে বা ব্যবহার করতে পারে না।
মালানার নিজস্ব আইন
এই গ্রামে প্রচলিত রয়েছে এক স্বাধীন বিচারব্যবস্থা। মালানার লোকেরা ভারতের সাধারণ আইনব্যবস্থার পরিবর্তে জামলু রিষির নির্দেশনা অনুসারে নিজস্ব নিয়মে চলেন। গ্রামের প্রতিটি সমস্যার সমাধান হয় লোকসভা এবং উচ্চ আদালত ধরনের দুটি গ্রামীণ পরিষদের মাধ্যমে।
মালানার ধর্ম ও বিশ্বাস
জামলু রিষিকে এখানকার প্রধান দেবতা হিসেবে পুজো করা হয়। বিশ্বাস করা হয় , এই দেবতা গ্রামের প্রত্যেকটি নিয়ম সহ শাসন ব্যবস্থার নিয়ন্তা। মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি শুধু স্থানীয় পুরোহিতদের। বাইরের কেউ এর ধারে কাছেও যেতে পারে না।
মালানার সামাজিক দূরত্বের নিয়ম
মালানা এমন একটি স্থান , যেখানে “touch - free culture” প্রচলিত। অর্থাৎ বাইরের কেউ গ্রামবাসীকে স্পর্শ করতে পারে না। স্থানীয়দের বাড়ি , মন্দির , এমনকি দেওয়ালেও হাত দেওয়া নিষিদ্ধ। পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট পথ নির্ধারণ করা আছে , তার বাইরে চলাফেরা নিষেধ। এই নিয়মগুলো তাদের শুদ্ধতা সহ পবিত্রতা রক্ষার প্রাচীন বিশ্বাসের অংশ।
কিভাবে যাবেন মালানা?
সড়কপথ - মানালি বা কুল্লু থেকে গাড়িতে করে ভুন্টার (Bhuntar) যেতে হবে। সেখান থেকে গাড়িতে জারি (Jari) নামক জায়গা পর্যন্ত যেতে হয়।
ট্রেকিং -জারি থেকে মালানা গ্রামে পৌঁছাতে হয় প্রায় ৪ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে। এই ট্রেকিং পথটিই বহু অভিযাত্রীর কাছে মালানার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ।
ভ্রমণের সেরা সময়
বসন্ত ও গ্রীষ্ম (মার্চ – জুন) - আবহাওয়া শুষ্ক , দৃশ্য স্পষ্ট , এবং ট্রেকিং সহজ।
শরৎকাল (সেপ্টেম্বর – অক্টোবর) - শান্ত পরিবেশ সহ রঙিন প্রকৃতি উপভোগ করতে আদর্শ।
শীতকাল (নভেম্বর – ফেব্রুয়ারি) - তুষারপাতে ট্রেকিং কঠিন হয়ে যায় , তবে বরফপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।
থাকার ব্যবস্থা
মালানার মধ্যে খুব বেশি থাকার ব্যবস্থা নেই , তবে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় কিছু গেস্ট হাউস সহ হোমস্টে পাওয়া যায়। মানালি বা কাসোল থেকে দিনে দিনে ঘুরে আসাও সম্ভব , তবে সেখানে একরাত কাটানো হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও সতর্কতা
গ্রামবাসীর নিয়মের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রাখুন। কোনো বস্তুতে হাত দেওয়ার আগে অনুমতি নিন। নিজস্ব খাবার সহ জল সঙ্গে রাখুন। মাদকদ্রব্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মালানার নাম অতীতে “Malana Cream” এর কারণে কুখ্যাত হলেও এখন প্রশাসন এই বিষয়ে কঠোর। স্থানীয় পরিবেশ , প্রকৃতি সহ সংস্কৃতিকে সম্মান করুন।
মালানা গ্রাম শুধু একটি ভ্রমণ গন্তব্য নয় , এটি একটি জীবন্ত ঐতিহাসিক সহ সাংস্কৃতিক নিদর্শন , যেখানে আধুনিকতা এখনও ঢুকতে পারেনি। যেখানে হাজার বছরের পুরনো জীবনযাত্রা এখনও বর্তমান। এই গ্রামে পা রাখলে আপনি শুধুমাত্র পাহাড় বা প্রকৃতি নয় , এক ভিন্ন চিন্তাধারার সভ্যতা-কে অনুভব করবেন। এমন এক গ্রামে যেখানে আপনি শুধু প্রকৃতিকে নয় , নিজেকেও নতুনভাবে খুঁজে পাবেন।
ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে নয়া মোড়
ট্রাম্পের নোবেল হাতছাড়া হওয়ার ক্ষতে প্রলেপ
বিক্ষোভ রুখতে নির্মম দমননীতির পথ বেছে নিয়েছে শাহবাজ শরিফের প্রশাসন
স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চলেছে গাজা
হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ প্রশাসনের