690b51d2b10bd_fish-spa-dangers-featured-image
নভেম্বর ০৫, ২০২৫ বিকাল ০৭:০৩ IST

সৌন্দর্যের খোঁজে ফিস ট্যাংকে , তার পর হারালেন সব আঙুল

নিজস্ব প্রতিনিধি , ক্যানবেরা - সৌন্দর্যের খোঁজে মানুষ কত কিছুই না করে! কেউ যায় স্পা- সালনে ত্বকের যত্ন নিতে, কেউ আবার পা মসৃণ করার জন্য বেছে নেয় এক অদ্ভুত পদ্ধতি—“ফিশ পেডিকিউর।” কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান নারী ভিক্টোরিয়া কারথয়েসের (Victoria Curthoys) জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, এই আপাত নিরীহ সৌন্দর্যচর্চা কখনও কখনও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

২০০৬ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের এই নারী দুর্ঘটনাক্রমে ভাঙা কাচের উপর হাঁটতে গিয়ে পায়ের আঙুলে গুরুতর কাটা পান। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় তার কিছু আঙুল কেটে ফেলতে হয়। চিকিৎসার পর তিনি পুরোপুরি সুস্থ হন।

চার বছর পর, ২০১০ সালে থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে ভিক্টোরিয়া একটি “ফিশ স্পা”-তে যান। এই থেরাপিতে ব্যবহৃত হয় Garra rufa  নামে এক প্রজাতির ক্ষুদ্র মাছ, যাকে বলা হয় “ডাক্তার ফিশ।” ধারণা করা হয়, এই মাছ মৃত ত্বক খেয়ে ফেলে, ফলে ত্বক হয় মসৃণ ও সতেজ। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এটি চর্মরোগ যেমন একজিমা বা সোরিয়াসিসের উপশমেও সাহায্য করে।

কিন্তু ভিক্টোরিয়ার ক্ষেত্রে ঘটে উল্টোটা। তিনি জানতেন না, যে জলের ট্যাঙ্কে তার পা ডুবিয়েছিলেন, সেটি ছিল দূষিত। সেই জলে ব্যাকটেরিয়া তার পুরনো অস্ত্রোপচারের ক্ষতস্থানে সংক্রমণ ঘটায়। অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে তিনি দীর্ঘদিন জ্বর ও অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন। অবশেষে চিকিৎসকরা শনাক্ত করেন যে, তিনি osteomyelitis  নামের এক বিরল হাড়ের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন।

পরের দুই বছরে সংক্রমণ এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, প্রথমে তার ডান পায়ের বড় আঙুলটি কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ থামে না। ধীরে ধীরে তার বাকি সব আঙুলও কেটে ফেলতে হয়—পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ বছর।

২০১৭ সালে শেষ আঙুলটি অপসারণের পর ভিক্টোরিয়া বলেন, “এখন আমার পা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সুস্থ। আমি ভাগ্যবতী যে বেঁচে আছি।” তিনি নিজের অভিজ্ঞতার ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন, যাতে অন্যরা এই বিপজ্জনক পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হয়।

বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে অনেক দেশে ফিশ পেডিকিউর নিষিদ্ধ হয়েছে—এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ। কারণ, একই ট্যাঙ্কে বহু মানুষ পা ডুবিয়ে রাখায় ব্যাকটেরিয়া সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি প্রাণী কল্যাণের দিক থেকেও এই প্রথা বিতর্কিত।

ভিক্টোরিয়ার গল্প একটাই বার্তা দেয়—সৌন্দর্যের জন্য ঝুঁকি নেওয়া কখনও কখনও জীবনের বড় ভুল হতে পারে। “প্রাকৃতিক” বা “বিকল্প” চিকিৎসা বলেই সবকিছু নিরাপদ নয়। সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য।

TV 19 Network NEWS FEED