২১ জুলাই শহীদ দিবস কেন পালন হয়? ৩২ বছর আগে কি ঘটেছিল সেই দিনে ?
নিজস্ব প্রতিনিধি ,কলকাতা - একুশে জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবস। রাস্তাঘাট লোকে-লোকারণ্য । গ্রাম থেকে মফস্বল থেকে জেলা থেকে কাতারে কাতারে জনজোয়ার সেই দিন কলকাতা অভিমুখে পাড়ি দেয়। এই একুশে জুলাই নিয়ে বরাবরই আবেগপ্রবণ তৃণমূলের নেতা কর্মীরা । ঠিক কি ঘটেছিল সেই দিন ? একবার ফিরে যাওয়া যাক হাজার ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই ।
১৯৯৩ সাল, সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়নি। রাজ্য তখন বামফ্রন্ট সরকার , মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ।
সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। সেই সময় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবিতে এবং বাম সরকারের বিরুদ্ধে ছাপ্পা রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে ঠিক হয় ১৪ ই জুলাই হবে এই মহা মিছিল , কিন্তু ঐদিন প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের মৃত্যুর জন্য ২১ জুলাই সেই মহা মিছিলের দিন ঠিক হয় । সেদিন সকাল থেকে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কংগ্রেসের কর্মীরা মহাকরণের উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েছিলেন । বউবাজার থেকে ব্রেবন রোড , মেয়ো রোড থেকে স্ট্যান্ড রোড হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী সমর্থকে ছেয়ে যায় । সেই মিছিলকে রুখতে রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন ক্রসিং এ করা হয় পুলিশ ব্যারিকেড । উত্তেজিত মিছিল কে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদানে গেছে সেল ছুড়তে হয় । বিভিন্ন জায়গায় লাঠিচার্জ হয় । পরিস্থিতি ধীরে ধীরেআয়ত্তের বাইরে চলে যেতে থাকে । কংগ্রেসের সমর্থক এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে কার্যত খন্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিট এর পর পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে থাকে। কংগ্রেস সমর্থকদের ছড়া পাথরে একাধিক পুলিশকর্মী আহত হয় একাধিক পুলিশ গাড়িতে আগুন ধরানো হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট শুরু হয়ে যায় । তারাতলা থানার ওসি গুলিবিদ্ধ হন । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি চালায় । তাতে তের জন কংগ্রেস কর্মী মৃত্যুবরণ করেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শতাধিক আহত হয়। অপরদিকে পুলিশের পক্ষে প্রায় দুই শতাধিক আহত হয়।
কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছিলেন -
শ্রীকান্ত শর্মা, বন্দনা দাস ,দিলীপ দাস ,মুরালি চক্রবর্তী, রতন মন্ডল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ,বিশ্বনাথ রায় ,অনন্ত দাস, কেশব বৈরাগী, রঞ্জিত দাস ,প্রদীপ রায়, আব্দুল খালিক, ইনু মিয়া।
তৎকালীন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার এক সাক্ষাৎকারের জানান , গুলি চালানোর অর্ডার তিনি দেননি , সেটা কোন অধস্তন অফিসার তার অনুমতি না নিয়েই গুলি চালানোর অর্ডার দিয়ে দেন । তবে কার নির্দেশে সেদিন পুলিশ গুলি চালিয়েছিল সে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতি । কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তদন্তকারী দল পাঠানো হয় কলকাতায়। মূলত এই ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে রাজ্যের বিরোধী মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়। ১৯৯৩ সালের এই এই ঘটনার পর থেকে প্রতি বছর ২১ শে জুলাই দিনটিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস দল তৈরি করেন এবং রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। আর তার পরের ইতিহাস সকলেরই জানা ২০১১ সালের নির্বাচনে দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন।