আকাশদ্বীপ ঝড়ে ছারখার ব্রিটিশ দুর্গ, এজবাস্টনে প্রথম জয়ে সমতা ফেরাল ভারত
নিজস্ব প্রতিনিধি, এজবাস্টন - দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট। মেঘলা গগনে জ্বলে উঠল আকাশদ্বীপ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্রিটিশ শিবিরকে একাই উড়িয়ে দিয়েছেন। বৃষ্টির জেরে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে খেলা শুরু হলেও লক্ষ্য স্থির ছিল ভারতের। ৭ উইকেট নিয়েই ফিরতে হবে সাজঘরে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তা সহজ করে দিলেন আকাশদ্বীপ। ৩৩৬ রানের বিরাট জয়ের সঙ্গে এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে জিতল ভারতীয় দল। সিরিজে সমতা ফেরাল শুভমন গিলরা।
বুমরার অনুপস্থিতি বুঝতে না দিয়ে নিজের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছেন বাংলার পেসার। খেলা শুরু হওয়ার চতুর্থ ওভারেই অলি পোপকে কাবু করে সাজঘরের রাস্তা দেখান তিনি। এর ঠিক কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই হ্যারি ব্রুককে নিজের শিকার বানান। বল পিচ করানোর সঠিক জায়গায় বারবার আঘাত করার ফলেই সফলতা পেয়েছেন আকাশদ্বীপ। চতুর্থ দিনে জো রুট ও বেন ডাকেটকেও চমকে দিয়েছেন তিনি। দুই ব্যাটারকে রীতিমত অপ্রত্যাশিত দুটি ডেলিভারি করেন।
অলি পোপ ও ব্রুক সাজঘরে ফেরায় ভিন্ন পরিকল্পনায় ব্যাট করতে শুরু করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও জেমি স্মিথ। বাজবল কি তা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার রাস্তায় হাঁটার কথাই ভাবেননি দুই ব্যাটার। ভেবেছিলেন কোনোভাবে যদি ম্যাচটি ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। মাটি আঁকড়ে পরে থেকে ৭০ রানের অংশীদারিত্ব করে ফেলেন দুই ব্যাটার। তবে লাঞ্চের পূর্বে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে স্টোকসের। ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার হন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ স্পিনার দিয়ে বল করানোর পর অবশেষে সাফল্য পেলেন ভারতীয় অধিনায়ক। ধারাভাষ্যকারদের প্রশ্নের জবাব দিলেন তিনি।
স্টোকসের আউটের পর আকাশদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রতি আক্রমণ সানায় জেমি স্মিথ। একই ওভারে দুটি শর্ট বলে মারেন দুটি ছয়। এরপর আরও একটি শর্ট বল দেন তিনি। সেখানেই হল অতি লোভে তাতি নস্ট। স্লোয়ার বলটি পড়তে না পেরে আবার চালিয়ে দেন স্মিথ। বাউন্ডারি লাইনে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে তালুবন্দি হয়ে স্মিথের ক্যাচ। স্টোকস ও স্মিথের আউটের পরেই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের জয়। এবার শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
এরপর ক্রিস ওকসের রূপে একটি মাত্র উইকেট নেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। জস টাঙ্গকে সাজঘরে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজা। ফের ৩৮ রানে ব্রাইডন কার্সের উইকেটও ঝুলিতে ভরেছেন আকাশদ্বীপ। ধারাবাহিকভাবে দুই টেস্টে ভাল বল করেছেন। প্রথম টেস্টেও ৪ উইকেট নিয়ে মহম্মদ সিরাজকে যোগ্য সাথ দিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে সিরাজ পেয়েছেন ১টি মাত্র উইকেট।
আকাশদ্বীপ ছাড়াও ভারতীয় দলের জয়ে অন্যতম কান্ডারী অধিনায়ক শুভমন গিল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪৩০ রান করার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। নজিরের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন।অধিনায়ক হিসেবেও পেয়েছেন প্রশংসা। সঠিক সময়ে সঠিক বোলারদের কাজে লাগিয়ে উইকেট তুলে নিয়েছেন। তাই আকাশদ্বীপের পাশাপাশি গিলের কৃতিত্বও প্রশংসনীয়। সফল হল মর্ণি মর্কেলের উদ্দেশ্য। নিরাপদ জায়গায় ডিক্লেয়ার দেওয়ার ফলস্বরুপ সিরিজে ফিরে এল ভারত। পঞ্চম দিনে বার্মিংহামের আকাশের কাল মেঘ কাটিয়ে অবশেষ জ্বলে উঠল বাংলার আকাশদ্বীপ। লর্ডস টেস্টে কার্যত জায়গা করে নিলেন তিনি।
এজবাস্টন টেস্টের পঞ্চম দিনে রীতিমত হিমশিম খেয়ে গেল ইংল্যান্ড। চতুর্থ দিনেই ক্রলি, ডাকেট ও রুট আউট হওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে পরে ইংল্যান্ড। ফের পঞ্চম দিনের শুরুতে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে বৃষ্টি। ৫০০-এর ওপর রান তাড়া করতে নেমে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে আরও পিছিয়ে পরে ব্রিটিশ শিবির। তবে ভারতের হাতে ৭ উইকেট তোলার জন্য ছিল বেশ খানিকটা সময়। সেই সময় কাজে লাগিয়েই সিরিজে সমতা ফেরাল গুরু গম্ভীরের দল। ইংল্যান্ডকে ২৭১ রানেই গুটিয়ে দেয় ভারত। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০১৪ রান করে এজবাস্টনে ছাপ ফেলল অধিনায়ক শুভমন গিলের ভারত। লর্ডসে আবার প্রথম থেকে শুরু করবে দুই দল।